ইয়াহিয়া নয়নঃ
রাজধানীর জনপ্রিয় গণপরিবহন এখন মেট্রোরেল। উদ্বোধনের পর থেকেই রাজধানীবাসীর আগ্রহ বেড়েছে মেট্রোরেলে ভ্রমণের। উত্তরা থেকে মতিঝিল যাতায়াতে ভোগান্তি কমেছে, কমেছে সময়ের অপচয়। প্রতিটি ট্রেনে ঠাসাঠাসি করে চলছেন যাত্রীরা। বাস সার্ভিসের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়াতেও মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। কিন্তু জনবল সংকটে মেট্রোরেল দিন দিন যাত্রীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ঘোষণামত ট্রেন প্রতি দশ মিনিট পর পর আসেনা। প্রায়ই বারো থেকে পনের মিনিট বিলম্ব হয় পরবর্তি ট্রেন আসতে। ফলে স্টেশনে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এতে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে অনেকেই ট্রেনে উঠতে পারেন না। অপেক্ষা করতে হয় পরবর্তি ট্রেনের জন্য। কর্তৃপক্ষ যদি প্রতিটি ট্রেনে আরো দুটি করে কোচ সংযোজন করে দেয় তাহলে এক্ষেত্রে যাত্রী ভোগান্তি কমে যেতে পারে, এমনটাই বলছেন নিয়মিত যাত্রীরা।
প্রতিটি ট্রেনের সামনের দুটি কোচ নারী যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু অধিকাংশ নারী যাত্রীরা তা জানেন না। প্রতিটি ট্রেনেই দেখাযায় নারীযাত্রীদের দুই কোচে তেমন যাত্রী নেই। অথচ নারীরা অন্য কোচে পুরুষযাত্রীদের সাথে ভীড়ে কস্ট করে যাচ্ছেন। যদি প্রতিটি স্টেশনে পুরুষ আনসারদের সাথে নারী আনসার নিয়োগ দেয়া যায়, তাহলে তারা নারীযাত্রীদের সচেতন ও সহযোগীতা করতে পারেন। এতে প্রতিটি কোচেই যাত্রীভোগান্তি কমে আসবে।
বর্তমানে মেট্রোরেল চলছে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। শুরু এবং শেষ ঘন্টায় শুধুমাত্র র্যপিট পাশের যাত্রীরা উঠতে পারেন। অনেক যাত্রী জানেন না র্যাপিট পাশ কোথা থেকে কিভাবে ক্রয় করতে হয়। অথচ তা প্রতিটি স্টেশনের নির্দিষ্ঠ কাউন্টারে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রতিটি স্টেশনে আনসার সদস্যা যাত্রীদের উৎসাহিত করতে পারে। কিন্তু তেমন কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষীত হয়না।
প্রতিটি স্টেশনে আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। যাত্রীরা কোন বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো তথ্য দিতে পারেনা। কারণ তাদের সেভাবে কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের সংখ্যা বাড়িয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি। কয়েকটি স্টেশনে এখনও চালু হয়নি চলন্ত সিঁড়ি। ফলে বয়স্ক এবং অসুস্থ যাত্রীদের সিঁড়ি বেয়ে স্টেশনে ওঠানামা করতে হয়। স্টেশনে যে লিফট রয়েছে তা সাধারণ যাত্রীরা বুঝতে পারেন না। যদিও লিফটের ধারণক্ষমতা কম। কিন্তু সেখানে পুরুষ কিংবা নারী আনসার সদস্যদের সহযোগীতা পেলে বয়স্ক এবং অসুস্থ যাত্রীদের দুর্ভোগ কমতো।
প্রায়ই দেখা যায়, অনেক অসচেতন যাত্রী বড় লাগেজ – ব্যাগেজ নিয়ে ট্রেনে উঠছেন। অনেকে বস্তায় মালামাল ভরে ট্রেনে উঠছেন। অনেক যাত্রী কাঁচাবাজার (কাঁচা মাছ তরকারি) দুহাতে নিয়ে ট্রেনে উঠছেন। কারো কারো ব্যাগে শুটকি মাছও থাকে। এসবের ফলে অন্য যাত্রীরা বিরক্তি প্রকাশ করেন। কারণ এগুলো নিয়মের মধ্যে পড়েনা। তাই এসব যাত্রীদের টিকেট সংগ্রহের সময়ই সতর্ক করা জরুরি। কিন্তু কোনো স্টেশনেই সতর্ক বা নির্দেশনা দেবার মত কেউ নেই।
এসব বিষয়ে আগারগাঁও স্টেশনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কোনা সেকশনেই পরিপূর্ণ জনবল নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্য মেট্রোরেল পুলিশ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যে পরিমান আনসার সদসস্যের দরকার বর্তমানে তার অর্ধেক আছে। এখানে জনবল সংকট প্রকট। তবে শিগগির এসবের সমাধান হয়ে যাবে। তিনি যাত্রীদের সহযোগীতার জন্য কৃতজ্ঞ বলে জানান। বলেন, দুএক মাসের মধ্যেই জনবল সংকট দুর হবে। যাত্রীরা আরো ভালো সেবা পাবেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ট্রেনের সময় বিলম্বের বিষয়ে বলেন, এটা টেকনিক্যাল বিষয়। কর্তৃপক্ষ সব বিষয়ে সচেতন আছেন।