আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ফাতরার বনের বেহুলার চরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্ত্বদের তিন দিনেও সনাক্ত করতে পারেনি বনবিভাগ। স্থানীয়দের অভিযোগ বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় জড়িত দুর্বৃত্ত¡রা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যাবে। দ্রুত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবী করেছেন তারা।
জানাগেছে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ফাতরার বন। ৪ হাজার ৪’শ ৪৮ একর বিস্তৃত এ বন। কয়েক শত বছরের পুরানো এ বনাঞ্চলটি বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বনবিভাগের আওতায় নিয়ন্ত্রিত। ফাতরার এ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি সকিনা ও নিশানবাড়িয়া নামে দুইটি বীটে বিভক্ত। এর মধ্যে নিশানবাড়িয়া বীটের বেহুলার চরে গত রবিবার রাতে দুর্বৃত্ত্বরা আগুন দেয়। তাদের দেয়া আগুনে ওই বেহুলার চরের অন্তত এক কিলোমিটার বনের গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের দাবী ৩০০ ফুট বিস্তৃত বন এলাকা পুড়ে গেছে। নিরবিচ্ছন্নভাবে ওই বনের আগুন ১৮ ঘন্টা জ্বলতে থাকে বলেন জানা প্রত্যক্ষদর্শী সুরুজ মিয়া।
খবর পেয়ে সোমবার সকালে নিশানবাড়িয়া ও ছকিনা বীটের বন কর্মকর্তাসহ স্থানীয়দের নিয়ে তিন ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে সোমবার দুপুরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু বন বিভাগ ও স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রণে আনার আগে অন্তত এক কিলোমিটার বন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের দাবী সাগরের ঢেউয়ে উপড়ে ফেলা শুকনো গাছগুলো পুড়ে গেছে। বনের মধ্য জীবিত গাছের কোন ক্ষতি হয়নি।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বনের বেশ ক্ষতি হয়েছে। সাগরের কিনারে থাকা বনের শুকনো গাছ ছাড়াও জীবিত গাছ পুড়ে একাকার হয়ে গেছে। সনাক্তের সুযোগ নেই শুকনো না জীবিত গাছ পুড়ে গেছে। এ ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও তালতলী বন বিভাগ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্ত্বদের সনাক্ত করতে পারেনি।
মঙ্গলবার বিকেলে বন কর্তৃপক্ষ তালতলী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছে। ওইদিন সকালে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উপকুলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালী (ডিএফও) মোঃ শফিকুল ইসলাম, বরগুনা উপকুলীয় বন কর্মকর্তা (এসিএফ) মোঃ তারিকুল ইসলাম, রেইঞ্জ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান ও বীট কর্মকর্তা হায়দার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় জামাল, হারুন ও নজরুলের অভিযোগ, শুকনো মৌসুমে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে আসে। ওই জেলেরা ফাতরার বনের বিভিন্ন চরের শুকনো গাছ দিয়ে রান্না করেন। বন বিভাগের লোকজন জেনেও তারা অজ্ঞাত কারনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। এতে ওই জেলেরা আরো সুবিধা পেয়ে বনের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে রান্না করছেন। তাদের দেয়া আগুনে বন পুড়ে গেছে। তারা আরো বলেন, বনে আগুনের খবর আমরা প্রায়ই শুনতে পাই। কিন্তু বন বিভাগ কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা এর বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেয় না। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তারা আরো বলেন, ১৮ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারতো তাহলে পুরো বনই পুড়ে ছাই হয়ে যেত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, সরকারী মাল দরিয়ামে ঢাল। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, তবে রক্ষা করবে কে? ফাতরার বনতো ভক্ষকের হাতে। তারা কেন রক্ষা করবে? বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের কারনেই আজ বনের এ অবস্থা। তারা আরো বলেন, বনেতো আগুন নতুন লাগে না। প্রায়ই শুনতে পাই বনে আগুন লেগেছে আবার জেলেরা নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কিন্তু কারা বনে আগুন ধরিয়ে দিলো তাদেরতো কোন দিন আইনের আওতায় আনতে শুনলাম না। তাই বনে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রæত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হলে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।
তালতলী উপজেলা বন কর্মকর্তা ( রেইঞ্জ) মোঃ মতিয়ার রহমান বলেন, আগুনে বনের ৩০০ ফুট বিস্তৃত সাগরের ঢেউয়ে উপড়ে পরা শুননো গাছগুলো পুড়ে গেছে। জীবিত গাছের কিছুই হয়নি। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি। কিন্তু এখনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে সনাক্ত করতে পারিনি।
তালতলী থানার ওসি মোঃ শহিদুল ইসলাম খাঁন বলেন, বন কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় থানার সাধারণ ডায়েরী করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উপকুলীয় বন বিভাগ পটুয়াখালী (ডিএফও) মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ফারতারর বনাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি। বনের যে ক্ষতি হয়েছে তা অল্প সময়ের মধ্যেই পুরণ করা যাবে। তিনি আরো বলেন, শুকনো মৌসুমে জেলেরা সাগর পাড়ে নৌকা বেঁধে বনের শুকনো কাঠ নিয়ে রান্না করে। অসাবধানতা বসত তাদের থেকেই এ ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।