Homeসারাদেশফার্মেসীতেই গড়ে উঠেছে মিনি হাসপাতাল

ফার্মেসীতেই গড়ে উঠেছে মিনি হাসপাতাল

ফার্মেসীতেই গড়ে উঠেছে মিনি হাসপাতাল

পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে বেশ কয়েকটি ঔষধ ফার্মেসীতে গড়ে উঠেছে মিনি হাসপাতাল। ফার্মেসী ওয়ালারা নিজেই ডাক্তার সেজে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশন। নেই কোন ডিগ্রি, নেই এমবিবিএস সার্টিফিকেটও, তারপরও ডাক্তারের ন্যায় প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন এন্টিবায়োটিক ঔষধ।

এমন চিত্র দেখা গিয়েছে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ফকিরগঞ্জ হাটের কয়েকটি ঔষধ ফার্মেসীতে। দেখা যায় ওই হাটের ‘মেসার্স শামীম ফার্মেসী’ ও ‘মেসার্স রাজ ফার্মেসীতে’ চালানো হচ্ছে হাসপাতালের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম। নেই কোন বেড, নেই স্বাস্থ্যকর উপযোগী পরিবেশ তবুও মায়ের কোলে রেখে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে গ্যাস ও স্যালাইন। যা শিশুদের জন্য হুমকি সূরুপ। গাঁয়ের সাথে গাঁ ঘেঁষে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন ছোট শিশুদের নিয়ে আসা মায়েরা৷

সরেজমিনে ‘মেসার্স শামীম ফার্মেসীতে’ দেখা যায়, চারদিকে অসংখ্য ধুলোবালি, গাড়ির হর্ণের তীব্র শব্দ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং ছোট কোণঠাসা একটি কক্ষে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। মেইন রাস্তার উপরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন ছোট শিশুদের নিয়ে আসা মায়েরা৷ নেই কোন বেড বা বিছানাপত্র তবুও মায়ের কোলে রেখেই রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে ছোট শিশুদের দেওয়া হচ্ছে গ্যাস ও স্যালাইন৷ ফার্মেসীর মালিক মোঃ শামীম নিজেই ডাক্তার সেজে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশন। নিচ্ছেন আবার ৪০ টাকা করে ভিজিটও। কোন অনুমোদন বা এমবিবিএস সার্টিফিকেট না থাকার পরও প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন এন্টিবায়োটিক ঔষধ। আবার নিজ ফার্মেসীতেই নিতে হবে প্রেসক্রিপশনে লিখা সব ঔষধপত্র যা বাধ্যতামূলক। যা আগামীদিনের অনাগত শিশুদের জন্য হুমকি সরুপ। ইতোপূর্বে মোঃ শামীম এমবিবিএস না হওয়া সত্বেও তার নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকিতে সেই পদবী মুছে ফেললেও প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক লিখার অভ্যাসটা এখনো মুছতে পারেনি।

এনিয়ে মোঃ শামীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকলেই এন্টিবায়োটিক দিতে পারলে আমি কেন পারবনা৷ একজন এমবিবিএস ডাক্তার এন্টিবায়োটিক দিলে কোন ক্ষতি হয়না আর আমি দিলেই ক্ষতি হয়ে যায়। আমি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখি। এতে কখনো কারো সমস্যা হয়নি। সবাই লিখে তাই আমিও লিখি, সবাই বন্ধ করলে আমিও বন্ধ করব৷ তিনি আরো বলেন, আমি অনুমোদন ছাড়াই প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখি সেটা সমস্ত পেপার পত্রিকা এবং টেলিভিশনে প্রচার করতে প্রতিবেদেককে বলেন৷

অপরদিকে, সারের তীব্র গন্ধ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং ছোট একটি কোণঠাসা কক্ষে চিকিৎসা দেওয়ার চিত্রও লক্ষ করা গেছে ‘মেসার্স রাজ ফার্মেসীতেও’। সেই ফার্মেসীর মালিক রাজ কুমার৷ তিনিও এমবিবিএস ডাক্তারের ন্যায় প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন এন্টিবায়োটিক ঔষধ। যদিও এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখার কোন যোগ্যতা তিনার নেই। তবুও দেদারসে ছোট শিশুদের হাল্কা ঠান্ডা,জ্বর বা সর্দি হলেও দিচ্ছেন এন্টিবায়োটিক ঔষধ। সমস্ত ঔষধপত্র নিতে হয় তারই ফার্মেসীতেই৷ রাস্তার ধারে মায়ের কোলে রেখে কোন বেড বা বিছানাপত্র ছাড়াই এখানেও শিশুদের দেওয়া হচ্ছে গ্যাস ও স্যালাইন৷

প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক লিখার বিষয়ে রাজ কুমার জানান, এমবিবিএস সার্টিফিকেট আমার নেই। তবে আমার ডিএমএফ কোর্স করা আছে। তবে প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, যে সমস্ত রোগীর অবস্থা ভালো নয় এবং গুরুতর শুধু তাদেরকেই এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখে দিচ্ছি। আর এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখার কোন যোগ্যতা তিনার নেই বলেও জানান।

এনিয়ে পঞ্চগড় জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, এসব হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। শিশুদের সামান্য ঠান্ডা, জ্বর বা সর্দির জন্য সব সময়ই এন্টিবায়োটিক বা গ্যাস দেওয়া যায়না৷ শুধুমাত্র একজন অভিজ্ঞ ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে শিশুর চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। সকলের সচেতনতার মাধ্যমে ঐক্য গড়ে তুলে এসব হাতুড়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আরো সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি। তবে এরকম কোন অভিযোগ পেলে প্রশাসনের সহযোগিতায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা৷

এদিকে, যোগ্যতা না থাকা সত্বেও প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ অফিসার ডা. মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, এমবিবিএস এবং বিটিএস ছাড়া কেউ এন্টিবায়োটিক ঔষধ প্রেসক্রিপশনে লিখতে পারবেন না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছাড়া এবং অস্বাস্থ্যকর ও খোলা পরিবেশে কেউ গ্যাস বা স্যালাইন দিতে পারবেনা। ইতোপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জরিমানা ও সচেতন করা হয়েছিল। তবে এমন কার্যক্রম পুনরায় চালু করলে আবারো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাহায্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments