Homeরাজনীতি১২ প্রার্থীর ৮ জনকেই চেনেন না ভোটাররা

১২ প্রার্থীর ৮ জনকেই চেনেন না ভোটাররা

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদরের একাংশ) আসনে এবার ১৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত জমা দিয়েছেন ১২ জন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিরাজ মুক্তাদির ও যুবলীগ নেতা শামসুল ইসলাম মনোনয়ন জমা দেননি। তবে চারজন ছাড়া বাকিদের চেনেন না ভোটাররা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের জন্য ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করবেন, তাদের আটজনের রাজনীতিতে তেমন পরিচিতি নেই। হঠাৎ করেই তারা কেন সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী হলেন—এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তর মেলেনি প্রার্থীর কাছ থেকে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী একজন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী দুজন এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীর রাজনীতিতে পূর্ব পরিচয় রয়েছে। বাকি আট প্রার্থী কখনো রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন না। তাদের বাড়ি জেলা সদরের বিভিন্ন গ্রামে। তারা জেলা শহরে ও ঢাকায় ব্যবসায় জড়িত।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ১২ জন হলেন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চোধুরী নয়ন, তার স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী রুবিনা ইয়াসমিন লুবনা, জাতীয় পার্টির প্রার্থী বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠু, তৃণমূল বিএনপির আবদুল্লাহ আল মাসুদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের শরীফুল ইসলাম, জাসদের আমির হোসেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোরশেদ আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, আমরা কজন মুজিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এএফ জসিম উদ্দিন আহমেদ, রায়পুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জহির হোসেন, ইমাম উদ্দিন সুমন, মনসুর রহমান ও ফরহাদ মিয়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এদের মধ্যে অ্যাডভোকেট নয়ন ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। তার স্ত্রী লুবনা সভা সমাবেশে না গেলেও তিনি মোটামুটি পরিচিত। রাজনীতিতে তার পরিচিতি ব্যাপক। তবে বাকি সাতজন রাজনৈতিক অঙ্গনে একেবারেই অপরিচিত। তারা প্রত্যেকে এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচন করছেন।

এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লার মেঘনা এলাকায় সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি সেলিনা ইসলাম (দুর্নীতির মামলায় সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কুয়েতের কারাগারে বন্দি রায়পুরের সাবেক এমপি কাজি শহীদুল ইসলামের স্ত্রী)। তিনি বলেন, ‘রায়পুরে স্বামীর আসনে আওয়ামী লীগের ফরম কিনেছিলাম, তা না পাওয়ায় রায়পুর আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়ে নির্বাচন করছি। এটা আওয়ামী লীগের দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে।’

সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নয়ন বলেন, ‘দল আমাকে আবারও সুযোগ দিয়েছে। আমি দলের সম্মান রাখব বলে আশাবাদী, তা ছাড়া এলাকার মানুষের দোয়া নিয়ে মাঠে নেমেছি। জয়-পরাজয় এলাকার মানুষই নির্ধারণ করবেন। গত উপনির্বাচনে এমপি হয়ে দুই বছরে রাস্তাসহ প্রায় ৪শ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছি।’ তার স্ত্রী লুবনা বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমাকে ডামি প্রার্থীও বলা যাবে না। এটা দলীয় নির্দেশেই হচ্ছে। তবে বাকি আট প্রার্থীর তেমন রাজনৈতিক পরিচিতি নেই।

জাতীয় পার্টির বোরহান উদ্দিন আহাম্মেদ মিঠু বলেন, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের জোট এ আসনে আমরা একবার নির্বাচিত হয়েছি। গতবারও দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কৌশলগতের কারণে কাজী শহীদুল ইসলাম পাপুলকে দেওয়া হলে তার কুয়েতে সাত বছর দণ্ড হয়ে যায়। আমরা নিতে পারিনি। তবে এবার দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি দলের নোয়াখালী জেলার সাধারণ সম্পাদক ঠিক; কিন্তু আমি রায়পুরেরই (চরমোহনা গ্রাম) সন্তান। তাই আমার জয় নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ। আর সব প্রার্থীই জেলা সদরের বাসিন্দা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জহির হোসেন কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। তবে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট শরীফুল ইসলাম, জাসদের আমির হোসেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোরশেদ আলম বলেছেন, ‘দল থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলায়, আমরা মনোনয়ন জমা দিই।’

তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাম উদ্দিন সুমন, মনসুর রহমান ও ফরহাদ মিয়া আগে কখনো রাজনৈতিক ময়দানে দেখা যায়নি। কেন প্রার্থী হয়েছেন—প্রশ্নে তারা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছে, আমরাও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করব। আমরা জেলা সদরের বাসিন্দা।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে। তবে বাকি তিনজনের নাম শোনা গেলেও সাত প্রার্থীর নামও শোনেনিনি বলে জানিয়েছেন এলাকার ভোটাররা। নির্বাচন এলেই প্রার্থীদের ছড়াছড়ি দেখতে পাই। দেশে করোনাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের সময় দু-তিনজন ছাড়া বাকিদের কখনোই দেখা যায়নি এলাকায় এবং সহযোগিতাও করতে দেখিনি।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার সুরাইয়া জাহান বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর উপজেলার ১০টি ও সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন) আসনে দুই স্বতন্ত্র নারীসহ ১৪ প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। জমা দিয়েছেন ১২ জন। মনোনয়নপত্রগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বৈধ প্রার্থীদের তালিকা নির্দিষ্ট তারিখে ঘোষণা করা হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments