মুদ্রার রিজার্ভসহ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এই পরিস্থিতি উত্তরণে দরকার কার্যকর নীতি এবং দক্ষ ও সক্রিয় নেতৃত্ব। নতুন মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে—তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, গত দেড় দশকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনকে দূর এগিয়েছে। বিশেষ করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অভাবনীয়। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাংলাদেশ পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে ধাবিত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর সরকারকে এই উন্নয়নের সুফল সর্বজনীন করার জন্য কাজ করতে হবে। প্রবৃদ্ধি অর্জন বা মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে মধ্যম আয়ের শর্ত পূরণ হলেও, এ নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকলে চলেবে না। অর্থনৈতিক দিক থেকে মধ্যম আয়ের মান অর্জনের পাশাপাশি সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বত্রই উন্নতির এই ছোঁয়া দৃশ্যমান হতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পুরোনো ধ্যান-ধারণার বদল ঘটিয়ে নতুন মানসিকতার প্রমাণ দিতে হবে। রাজনীতিতে সহনশীলতার সংস্কৃতি বাড়াতে হবে। ভিন্নমত গ্রহণের মানসিকতা অর্জন করতে হবে। সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে হবে। বৃহৎ শক্তি হিসেবে এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের মনোযোগের অন্যতম ক্ষেত্র হবে সুশাসন। আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের পরও অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে নানা সমালোচনা সইতে হচ্ছে। এবার এ ইস্যুতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ কালবেলাকে বলেন, ‘গত দেড় দশকে দেশের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য খাতে যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা অব্যাহত রাখার জন্য এখন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের এ বিজয়ের মধ্যে দিয়ে অর্থনীতিতে অর্জিত অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে তা আরও সুসংহত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন সরকারের কর্তব্য হিসেবে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টিই সবার আগে আসবে। সবার আগে দরকার সাধারণ মানুষের জীবনে বয়ে চলা কষ্টগুলোকে আরও প্রশমিত করা। সরকারও নিশ্চয় চাইবে নতুন মেয়াদে মানুষকে আরো ভালো কিছু উপহার দিতে। সে ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন রুখতে হবে। নাজুক রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নয়নে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর প্রতি মনোযোগী হতে হবে। মোটাদাগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে সুশাসনের আওতায় আনার ওপর জোর দিতে হবে। কারণ ব্যাংকে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। টাকা পাচার হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। হুন্ডি প্রবণতা বাড়ছে। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। প্রত্যাশা থাকবে, সরকার সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষ হাতে সুচারুভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।’