ইমাম হোসেন হিমেল, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের প্রধান আকর্ষণ হিমশীতল খেজুরের রস। যেন এর সাথে কোন কিছুর তুলনাই হয় না। শীতকাল আসতেই খেজুর রসের ঘ্রাণ ও স্বাদ নেওয়ার একরকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়। স্বাদ ও ঘ্রাণ অনেক মিষ্টি, প্রচলিত খাদ্য হিসেবে খেজুরের রস বেশ সস্তা ও পুষ্টিকর ও উপাদেয়। কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ কনকনে ঠান্ডা ভোরে এর স্বাদ অতুলনীয়। শীতের তীব্রতায় খেজুর গাছ তার সর্বস্থ অমৃত ঢেলে দেয় তার রসে।
পৌষ-মাঘ মাসে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) থেকেই গাছ কাটছেন কলাপাড়া উপজেলার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের গাছি ইদ্রিস মূর্ধা তিনি এই বছরে ৭০ টির বেশি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। বছরে ৮০ / ৯০ হাজার টাকার রস সংগ্রহ করবেন তিনি তবে পরিশ্রমের তুলনায় লাভ খুব কম। তিনি আরও বলেন এই সময়ে সবচেয়ে বেশি রস পাওয়া যায় সাধারণত ঠাণ্ডা আবহাওয়া, কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে পর্যাপ্ত রস পাওয়া যায় এবং এর স্বাদও ভালো হয়। তাপমাত্রা বাড়লে খেজুর গাছ হতে নির্গত রসের পরিমাণ কম হয় এবং এর সুস্বাধু স্বাদও হারিয়ে যায়।
কলাপাড়ার গ্রামাঞ্চলে খেজুর রস সংগ্রহ করার পদ্ধতির কথা জানালেন আবদুর রাজ্জাক তিনি বলেন, গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে গাছ পরিষ্কার করতে হয়। গাছ পরিষ্কার করার পর ১৫-২০ দিন পর গাছ ছাটতে হয়। ছাটা যে অংশে রস নিঃসরণ হয় সে অংশে চিকন ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা বাঁশের কঞ্চি আধা ইঞ্চি ঢুকিয়ে দিতে হয়। কাঠির মধ্যে দিয়ে ফোটায় ফোটায় নির্গত রস গাছে ঝুলানো ছোট বড় হাড়িতে সংগ্রহ করা হয়। গাছ একবার ছাঁটলে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ৩ দিন শুকাতে হয়। এরপর আবার হালকা ছেটে পুনরায় রস সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরও বলেন এক সময়ে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে জীবন জীবিকা পরিচালনা করলেও এখন শুধু নাতী নাতকুরদের জন্যই গাছ কাটি পরিশ্রমের তুলনায় লাভ খুব কম তবুও ঐতিহ্য ধরে রেখেছি।
শীত মৌসুমে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য সাধারণ বিকেল বা সন্ধ্যার সময় গাছে হাঁড়ি প্লাস্টিকের বোতল ঝোলান এবং খুব ভোরে হাঁড়ি বোতলে জমাকৃত রস সংগ্রহ করেন। খেজুরের রস সাধারণত ডিসেম্বর হতে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়।
অনেক আবেগপ্রবণরা হাঁড়ি নামানোর সঙ্গে সঙ্গে গাছিদের কাছ থেকে সরাসরি কাঁচা রস পান করেন।
একসময়ে কলাপাড়া উপজেলার মেঠোপথে গাছে হাঁড়ি দেখা গেলেও সময়ের পরিবর্তনে কমে গেছে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা তবে এখনও কেউ কেউ ধরে রেখেছেন বাপ দাদার এই ঐতিহ্য।
কলাপাড়া উপজেলা মেডিকেল অফিসার জেইস খান লেলিন বলেন,খেজুরের রস খাওয়ার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমণের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
আইইডিসিআরের তথ্যমতে, ২০০১-২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে ৩০৩ জন আক্রান্ত এবং এদের মধ্যে ২১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসের আলামত দেশের ৩১টি জেলায় দেখা মিলেছে।