লক্ষীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
মানসিক-আধ্যাত্মিক মনোভাব পরিবর্তনে পরিবেশের ভূমিকা অনেক বড়—সাগর-নদী-পাহাড় দেখলে আপনার মন খুশিতে ভরে ওঠে, মসজিদে গুনাহের চিন্তা আসে না, অন্ধকার ঘরে বসে থাকলে মনে ছড়িয়ে যায় অবসাদ। যদি দলবদ্ধভাবে যেতে পারেন, তবে সবচেয়ে ভালো হয়। একসাথে খাওয়া-ঘুরার আনন্দের তুলনা হয় না। তাবলিগ নিয়ে অনেকের মনেই অনেক রকমের প্রশ্ন আছে।
ক) তাবলিগ কোন ধর্মীয় বিবাদকে ‘প্রমোট’ করে না, আপনি যে চিন্তারই হোন, তাবলিগ আপনাকে ‘জাজ’ করবে না।
আপনি কওমি মাদরাসার ভেতরে গেলে আহলে হাদিস-জামাতের সমালোচনা-পর্যালোচনা আকছার পাবেন, তবে তাবলিগকে এসব বিতর্ক থেকে দূরে রাখা হয়। মতাদর্শিক পরিচয় নিয়ে মাদরাসার সাথে সম্পর্ক রাখা সহজ নয়, তবে তাবলিগে এসব কিছুই গুরুত্বহীন, আপনি মুসলমান এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তাই মালয়েশিয়ান তাবলিগে শাফেয়ী নিয়মে মাসায়েল বলা হয়, সৌদিতে সালাফি ধারায় মৌলিক ‘আকিদা-মাসায়েল’ আলোচনা করা হয়।
খ) তবে আধুনিক মানুষের জন্য তাবলিগকে ‘হজম’ করা অনেকক্ষেত্রে সহজ নয়।
তাবলিগে যারা যান, তারা অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। খুবই সাধারণ তাদের কথাবার্তা। তাবলিগের ওয়াজ-কিতাবের ভাষা-কল্পনা প্রাচীনপন্থী—কারামাত-অলৌকিকতার গল্প ছড়িয়ে থাকে তাবলিগের পদে পদে। যারা দুনিয়াকে নিছক কজ এন্ড এফেক্টে ভাবতে অভ্যস্ত, যাদের মনে বসে আছে বৈজ্ঞানিক ভাষা-যুক্তি, তাদের অনেকের কাছে তাবলিগের অলৌকিক ভাষা-গল্পে অস্বস্তি লাগবে, এটা সত্য। তবে আপনি যদি আরও গভীরভাবে ভাবতে শিখেন, বৈজ্ঞানিক দর্শনের সাথে পরিচিত হন, তবে ধরতে পারবেন, আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অনেককিছুই ‘লৌকিক’ নয়। আমাদের ভাব-ভালোবাসা-ধর্ম কোনকিছুই নিছক বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে আবদ্ধ নয়, ফজরের নামাজ কেন দুই রাকআত, এর কি কোন যৌক্তিক উত্তর আছে?
তবে ইসলাম ধর্মে কুরআন-হাদিসের বাইরে অলৌকিকতার ভিত্তিতে কোন হুকুম-বিধান গ্রহণের সুযোগ নেই। বিধান গ্রহণ না করলেও আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কি অলৌকিকতা নেই? সৌন্দর্য-নৈতিকতা-ইতিহাসের গভীরে গেথে আছে অলৌকিকতা। ঘুম কেন জরুরী, সেই আলোচনা আপনি করতেই পারেন, একে নাম দিতে পারেন বৈজ্ঞানিক চিন্তা। তবে আপনি তো আলোচনা করে ঘুমকে বেছে নেননি। চিন্তা করার আগেই আপনি ঘুমাতে শিখে যান। এটা কি অলৌকিকতা নয়?