Homeঅপরাধবরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আতঙ্ক রিদম - আরাফাত গ্রুপ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আতঙ্ক রিদম – আরাফাত গ্রুপ

বিশেষ প্রতিবেদক(বরিশাল):- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাসে দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে রিদম-আরাফাত গ্রুপ। তাদের বিরুদ্ধে চুরি, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নির্যাতন ও মাদক সেবনসহ ক্যাম্পাস ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে শিক্ষকদের কক্ষে তালা দেয়া, সড়ক অবরোধ ও প্রশাসনকে বাঁধা দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে নানা তথ্য।

গ্রুপটির প্রধান নেতা হিসেবে চিহ্নিত হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আবুল খায়ের আরাফাত ওরফে জুয়েল এবং গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মোবাশ্বের রিদম ওরফে তানভিন৷ তাদের ছত্রছায়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কিছু শিক্ষার্থী মিলে করছে নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম।গ্রুপটির অধিকাংশ সদস্যদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দেবার ঘটনায় কারাভোগ করেছেন আরাফাত। জামিনে বেড়িয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের ঘটনায় হওয়া একটি মামলায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারী পুনরায় কারাগারে প্রেরিত হন আরাফাত।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ববিতে ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর অন্য পক্ষের হামলার পর ক্যাম্পাসে শক্ত অবস্থান করে মোবাশ্বের রিদম ও তার সহযোগিরা। সেই ঘটনায় মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আয়াত উল্লাহ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে গ্রুপটির সদস্যদের বিরুদ্ধে। ববি’র প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আহত শিক্ষার্থী অনশন করেছে।হামলার ঘটনার মামলায় রিদমসহ তার সহযোগিদের আসামী করা হয়। এরপর থেকেই দল বেঁধে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় একের পর এক অপরাধ করে দিনে দিনে ভয়ংকর রুপ নিতে শুরু করেছে রিদম ও আরাফাতের সাঙ্গপাঙ্গরা।

গতবছর অক্টোবরে ববি’র বঙ্গবন্ধু হলের একটি রুমে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুকুল আহমেদ কে আটকে রেখে রাতভর বেদম নির্যাতন চালায় গ্রুপটির একাধিক সদস্য। নির্যাতনের যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে পরে সে। এ ঘটনায়ও রিদম ও আরাফাত গ্রুপের একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে ববি’র প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন নির্যাতিত শিক্ষার্থীর বাবা।

২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বরে বন্দর থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন মোসা: ডলি বেগম নামের এক নারী। মামলায় গ্রুপটির ৮ সদস্য সহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়। অভিযুক্তরা নগদ অর্থসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।

২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ববি’র সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪- ১৫ সেশনের মো: মুয়ীদুর রহমান বাকি বাদী হয়ে বরিশাল বন্দর থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ এনে ৪২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ১৫/২০ জন বহিরাগত আসামী রেখে একটি মামলা দায়ের করেন।চিহ্নিত সেই আল মোবাশ্বির রিদমসহ গ্রুপটির প্রায় সকল সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়। এছাড়া আসামি হিসেবে অজ্ঞাত আরো ১৫/২০ জন বহিরাগতের কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়।

গত ২৭ জানুয়ারি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে মাতাল অবস্থায় ব্যাবসায়ীকে মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হয় তিন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গত ৩১ অক্টোবর গাঁজাসহ পুলিশের কাছে আটক হয় রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান রাফিন। জামিনে বের হয়ে মোবাশ্বের রিদমের সঙ্গে যুক্ত হয় সে। একাধিক মামলার আসামী এই গ্রুপটির অন্যতম সদস্য ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আল সামাদ শান্তকে গত ২ ফেব্রুয়ারী বিকেলে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঐ ঘটনার জেরে রাতেই বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। গত ৪ ফেব্রুয়ারী এ গ্রুপের আরেক সদস্য ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জুর জামিন আবেদন আদালতে নামঞ্জুর হলে প্রক্টর অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয় গ্রুপটির সদস্যরা।

শিক্ষা জীবনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লিপ্ত থাকলে আইনের দৃষ্টিসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ব্যক্তিত্বের সুফল বয়ে আনবে না বলে জানিয়েছে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের কমপক্ষে ১৩ জন সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ। তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, দলের অঙ্গ সংগঠনের পরিচয় দিয়ে কেউ অপরাধ করলে পার পেয়ে যাবার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শিক্ষা অর্জনের সময়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সকল অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ববি’র প্রক্টর ড. মোঃ আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমার কক্ষে তালা দেবার ঘটনা সত্য। যারা তালা দিয়েছিল তাদের কিছু দাবি ছিল। বিষয়টি তখন ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে জানানো হয়।

ববি’র উপাচার্য ড. মোঃ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে এখন নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বজায় রাখতে প্রয়োজনে আমরা আরো কঠোর হবো৷

বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুল বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এর গুটিকয়েক চিহ্নিত শিক্ষার্থীই বারবার নানা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে।ইতোমধ্যে তাদের তালিকা করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।আশা করি, ববি’র সকলেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments